বিসিএস ভাইভা পরামর্শ

Hafizur Rahman (Department of English University of Dhaka)

পুলিশ ক্যাডার (ASP) তে সুপারিশ প্রাপ্ত
বিসিএস ভাইভা এমন কোন প্লাটফর্ম না, যেখানে শুধু আপনার মেধা যাচাই করা হয়।আপনার ব্যক্তিত্ব,মন,মনন,চিন্তাভাবনা,রুচি,ব্যবহার এসবের ও একটা পরিচয় পাওয়া।পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র, রাজনীতি এসব নিয়ে আপনার চিন্তাধারা কেমন সেটা পরখ করে দেখবার প্লাটফর্ম।

এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন “মানুষ তার সপ্নের সমান বড়”।আর তাই ভাইভা হচ্ছে আপনার কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপ,অনেকটা চাকরির পুলসিরাত।কতই না স্বপ্নবুনে চলে আমাদের মানব মন,যার নেই সীমানা। কবে বলতে পারবেন মা /বাবা আর তোমাদের কষ্ট করতে হবে না,কবে বেলা বোস কে বলতে পারবেন চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি(খুবই কমন রেটরিক)।আরও কত রঙ্গিন স্বপ্ন।

#আপনাকে ভাইভাতে সব প্রশ্নের উত্তর পারতে হবে এমন না।সব প্রশ্ন আপনাকে পরখ করে দেখার জন্য না।তাই যেটা তেমন প্রশ্ন সেইটা না পারলে সমস্যা।

#আপনি কি সুটেড বুটেড হয়ে যাবেন কি না।ইংরেজিতে একটা কথা আছে COMPLETENESS বলে,তাই সেভাবে যেতে পারেন,আবার না গেলে যে বিরাট সমস্যা এমন কিছু না।

##খুবই স্বাভাবিক হালকা নারভাসনেস কাজ করা।এটা নিয়ে অযথা চিন্তা করে লাভ নেই।ভেতরে ঠুকে ব্যাটে বলে মিলে গেলে কোথায় যে চলে যাবে নারভাসনেস আপনি নিজে ও বুঝতে পারবেন না।

##বেয়াদব কাউকে চাকরি দেবার জন্য ঐখানে কেউ বসে নেই।তাই সৌজন্যমূলক নয় এমন ব্যবহার কারও কাছে কাম্য নয়।

একটা গল্প বলিঃ১৯৮৮ সালে ওয়াশিংটন, ডি. সির স্মিথসোনিয়ান অডিটোরিয়ামে আচেবের একটা বক্তৃতা অনুষ্ঠান হয়। আমেরিকার সাধারণ শিক্ষিত সমাজ যেহেতু গুণী লোকের কদর দিতে জানে সেজন্য এরকম পরিস্থিতিতে যথেষ্ট আগে না গেলে ঘরে বসার আসন পাওয়াই অসম্ভব। সেদিনও অডিটোরিয়ামটি ছিলো কানায় কানায় ভরা। দূর থেকে কালো ঋজু মানুষটিকে ছোটই দেখাচ্ছিলো। কিন্তু তিনি বললেন ঘন্টাখানেক। বিশ্ব রাজনীতি, পাশ্চাত্য দেশের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব, টেকনোলজি, নিজের লেখা ইত্যাদি নিয়ে আচেবে সেদিন অনেক কথাই বললেন। তিনি থামলে প্রশ্নোত্তর পর্যায়ে একজন তরুণ আমেরিকান উঠে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “মি. আচেবে, আপনি তো পাশ্চাত্যকে অনেক পরামর্শই দিলেন, কিন্তু আমি যদি জিজ্ঞেস করি পাশ্চাত্যকে দেওয়ার মতো আফ্রিকার কী আছে তাহলে আপনি কী বলবেন?“ শুনে আচেবে এক মূহূর্ত চুপ থেকে শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন: হিউমিলিটি। হলঘরে হাততালির রোল পড়ে গেল। বাস্তবিকই উদ্ধত আমেরিকা এবং তার অনুসারীদের কিছুটা বিনয়, কিছুটা শোভন আচরণ প্রদর্শণের পরামর্শই সেদিন দিয়েছিলেন আচেবে।

#আপনি খুব বেশি কিছু জানেন না এইটা মাথায় রাখবেন।বেশি বুঝতে গেলে আম ছালা দুইটাই যাবে।ভাইবা যাঁরা নিয়ে থাকেন তাঁরা আপনার/আমার থেকে ঠের বেশি জানেন। অভিজ্ঞতার দাম অনেক,আজকে না বুঝলেও আপনি যেদিন ওই আসনে যাবেন আর আপনার সামনে কোন পুচকে পোলা যদি ভাব নেয় তখন বুঝবেন।যৌক্তিক আলোচনায় যাবেন কিন্ত অনর্থক বিতর্কে না।

#কথা স্পষ্ট করে বলবেন।ম্যানলি অ্যাপরোচ। কোন কিছু নিয়ে আমতা আমতা না করে সরাসরি হ্যাঁ বা না বলাই শ্রেয়।

#ভাইভাতে ইন্সট্যান্ট মার্কিং হয় তাই যদি পালে হাওয়া লাগাতে পারেন, তবে আপনি ক্যাডারের দৌড়ে এগিয়ে।Rudyard Kipling তাঁর লেখা বিখ্যাত বই KIM এ বলেছিলেন "Whoever controls Khyber pass controls India".বিসিএসের ভাইভা অনেকটা তেমনই Whoever controls Viva board controls Cadre.

#কি কি জানতে হবেঃ

#নিজের সম্পর্কেঃনিজের পরিচিতি, নামের অর্থ, পরিবারের বংশ পরিচয়, উপাধি,আপনার নামের সাথে মিল আছে এমন বিখ্যাত/কুখ্যাত ব্যক্তি।

#বিশ্ববিদ্যালয়/ সাবজেক্ট : নিজ বিষয়ের বেসিক জানা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে।যদি হলে থেকে থাকেন তবে হল সম্পর্কে জেনে যাবেন। বিভাগের অতি পরিচিত স্যার সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। এক্ষেত্রে আমার শ্রদ্বেয় প্রফেসর ডঃ ফখরুল আলম স্যার এর কথা প্রণিধানযোগ্য “If you don’t know Professor Dr. Syed Manzoorul Islam, it’s your problem.

#প্রথম পছন্দঃ আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করতে হবে।কেন এটা প্রথম সে বিষয়ে নিজের করা নোট থাকা ভাল।এই ক্যাডার এর ভাল মন্দ দিক। এই ক্যাডার এর সাফল্যের গল্প(আপনার পূর্বসূরিরা যা যা করে চলেছেন, বা যেভাবে দেশ সেবা দিচ্ছেন সেগুলা জেনে যাবেন)। বাজার থেকে দুইটা বই কিনে নিবেন প্রথম পছন্দের ওপর। এছাড়া ইন্টারনেট, ফেসবুক এর মাধ্যমে আপডেইট থাকবেন।দিত্বীয় পছন্দের উপর ও পরাশুনা করে যাবেন।

#মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুঃ মুক্তিযুদ্ধের ওপর পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বাজার থেকে বই কিনে পড়তে পারেন,কিন্তু রেফারেন্স বইয়ের উল্লেখ না করে যদি বলেন আমি অমুক নীলক্ষেত পাবলিকেশন থেকে পড়েছি, তবে তা নেগেটিভ ইম্প্রেসন তৈরি করে।

যা করতে পারেন- বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে এক সাথে অনেক বই পড়তে পারবেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, ধানমন্ডির জাদুঘর, সৌহরাওয়াদীর টা ঘুরে আসতে পারেন।

যে বই গুলা রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা যেতে পারেঃ

১.বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু- আ শ ম বাবর আলী

২.অসমাপ্ত আত্মজীবনী -শেখ মুজিবুর রহমান

কারাগারের রোজনামচা -শেখ মুজিবুর রহমান

৩.শেখ মুজিব আমার পিতা/নির্বাচিত প্রবন্ধ -শেখ হাসিনা

.৪।দ্য রেপ অব বাংলাদেশ-অ্যান্থনী মাসকারেনহাস

৫।বাংলাদেশ রক্তের ঋণ-অ্যান্থনী মাসকারেনহাস

৬।A Tale of Millions/লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে

-মেজর রফিকুল ইসলাম

৭।Surrender at DHAKA-JFR Jacob

৮।আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর

-আবুল মনসুর আহমদ

৯।১৯৭১-ভেতর বাহিরে

-এ কে খোন্দকার

১০।যখন পুলিশ ছিলাম

-ধীরাজ ভট্টাচার্য

১১।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

১২।আন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-খালেদুর রহমান শাকিল

১৩।বাংলাদেশ:রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন

১৪।The code of criminal procedure,1898

১৫।PRB

১৬. আত্মসমর্পণের সাক্ষী(Witness to surrender) - সিদ্দিক সালিক

১৭. ফ্যাক্টস্‌ এন্ড ডকুমেন্টস্‌-বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড - অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

১৮. পঁচাত্তরের রক্তক্ষরণ - মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি

১৯. তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা - লে. কর্ণেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি(1)

২০. The Blood Telegram-Nixon, Kissinger, and a Forgotten Genocide - Gary J. Bass

২১. The Cruel Birth of Bangladesh - Archer K Blood

#নিজ জেলাঃ জেলার ইতিহাস,ঐতিহ্য,দর্শনীয় স্থান,ঐতিহাসিক স্থাপনা,ট্যুরিস্ট প্লেস ,লোক-সংস্কৃতি,সমাজব্যবস্থা,জীবিকা,অর্থনীতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব,শিক্ষা অনুরাগী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক অন্যান্য। জেলার মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা(মুক্তিযুদ্ধে খুলনা - মোল্লা আমীর হোসেন, ১৯৭১-চুকনগরে গণহত্যা- মুনতাসির মামুন ,"খুলনা ও যশোহর জেলার ইতিহাস"- সতীশচন্দ্র মিএ,খুলনা জেলার পরীক্ষার্থীদের অবশ্য পাঠ্য )সেক্টর/সাব সেক্টর কমান্ডরদের নাম,রাজাকারদের পরিচয় (The Godfather মুভিতে একটা ডায়লগ আছে, Keep your friends close. But enemies closer)। এছাড়া সান জুর "The Art of War" এ বলা আছে " If you know the enemy and know yourself, you need not fear the result of a hundred battles. If you know yourself but not the enemy, for every victory gained you will also suffer a defeat. If you know neither the enemy nor yourself, you will succumb in every battle."

যা করতে পারেন- বাংলা একাডেমিতে প্রতি জেলা ভিত্তিক বই পাওয়া যায়।এছাড়া প্রথম আলোর, প্রথমা প্রকাশনী ও মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা জেলা সিরিজ প্রকাশ করে থাকে ,সংগ্রহ করে পড়ে নিন।

ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টালঃ এইখানে আপনার জেলার অনেক তথ্য পাবেন,তবে একটু সতর্ক ভাবে পড়বেন, কিছু তথ্য বিভ্রাট থাকা একেবারে অস্বীকার করা যায় না।

#চলতি ঘটনাঃ পত্রিকা পরেন,ইন্টারনেট, ফেসবুকের মাধ্যমে আপডেইট থাকেন।পারলে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির খবর শুনুন, সরকারের সাফল্যগুলো জানুন,সাথে ব্যর্থতাগুলো।

মনে রাখার চেষ্টা করবেন আপনার দেয়া উত্তর আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সহায়ক. এক পেশে উত্তর দেয়া যাবে না। যেমন আপনি যে মতাবলম্বী সেরকম One sided answer হয় তবে ফলাফল নেগেটিভ হতে পারে।এমন হবে যে আপনি বিশ্বাস করেন একটা কিন্তু আপনাকে ওই গল্পের অন্য দিক ও শুনতে প্রস্তুত থাকতে হবে।আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম তেমনটি হয় নি,কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে এমন ধারণা পোষণ করতে হবে। In that cases if there is any evidence or example ,u can refer it there. it explores your personality that you believe in transformation and changes.

Here remember “We will never be able to bring any possible change anywhere if we do not believe in the possibilities of change itself”

বিগত বিসিএসের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করুন,এবং ধারণা নিন।

সর্বোপরি হিংসা পরিহার করুন।পরিচিত সবার থেকে সাহায্য নিতে চেষ্টা করুন, মনে রাখবেন বিল গেটস্ এর কথা ''Your most unhappy customers are your greatest source of learning"। বোকার পিছনে সময় ব্যয় না করে ডাইনামিক শত্রুকে ফলো করুন।মুই কি হনু রে ভাব পরিত্যাগ করুন।নিজে বক বক না করে যদি কোন পরামর্শ দেন স্যার রা তবে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনা মানে আপনি ওঁনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন,মনে রাখবেন জীবনে অনেক শুনতে হবে তাই আপনি প্রস্তুত কিনা সেটা ও দেখে নিবেন ওঁনারা।

শেষ করি Voltaire এর বিখ্যাত উক্তি দিয়ে "Life is a shipwreck, but we must not forget to sing in the life boats".

সবার জন্য শুভকামনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ