সমন্বিত ৫ ব্যাংক অফিসার(জেনারেল) ভাইবা প্রস্তুতি

তাহলে ভাইবায় ভালো করার টনিক কি?
সমন্বিত ৫ ব্যাংক এর উত্তীর্ণ ৭৯৪২ জনের ভাইবা আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এ এক বিশাল কর্মজজ্ঞ। জানুয়ারির ২১ তারিখ পর্যন্ত এই ভাইবা চলবে। কমবেশি ২৬০০ জন চাকরি পেতে যাচ্ছেন। একই সাথে প্রথম দফায় সাড়ে ৫ হাজার বাদ ও পড়বেন সেটা ভুলে গেলেও চলবে না। এতদিন এত সংগ্রাম করে ভাইবা অবধি এসেছেন। আপনার ক্লান্তি বা অবহেলা যেন আপনাকেই আপনার প্রতিদ্বন্দী বানিয়ে না দেয়।

নিঃসন্দেহে যে যোগ্য প্রার্থী সেই নির্বাচিত হবে, আপনাকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে অন্যের সাথে। তবে নিজেই যেন নিজের চাকরিটা পাওয়ার পিছনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করি সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরী। অনেক যোগ্য প্রার্থী নিজের ক্যালিবার থাকা সত্ত্বেও সেই ক্যালিবার দেখাতে না পারার জন্য বাদ পরেন। এর কারণ দুইটি....

১. আমি তো পারিই ভেবে ভাইবাকে তেমন গুরুত্ব না দেয়া

২. ভাইবাকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুতর কোন কিছু ভেবে নেয়া। মানে আদালতের সামনে আমি কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অপরাধী , এই বুঝি ফাঁসির হুকুম হলো।

তাহলে ভাইবায় ভালো করার টনিক কি? এরকম ১০০ টনিক ওয়ালা বই বাজারে পাওয়া যায় যার ১ টাও কাজের সময় কাজ করে না। তার মানে এই না যে আপনি ভাইবার বই পড়বেন না, একটা রাফ আইডিয়া পেতে অবশ্যই পড়বেন, তবে সাধারণ কিছু জিনিসের উত্তর আপনি বই এ খুঁজলে আদলে ক্ষতিই হবে, লাভ হবে না। যেমন-

ক. Introduce yourself জাতীয় প্রশ্ন এখন কম করা হয়, এটা বেশি কমন হয়ে গেছে। তবে যদি করা হয়েই যায়, আর যদি এই বেসিক প্রশ্নের গোছানো উত্তর না দিতে পারেন তবে আপনার সব প্রস্তুতি একবারে মাঠে মারা গেলো। এটা ক্ষমাহীন অপরাধ।

এই জায়গাটাতেই আপনার যত বেশি ভ্যারিয়েশান আনতে পারেন আনবেন। আপনি কবে কোথেকে পাশ করেছেন, আপনার বাবার নাম, মায়ের নাম, উনারা কে কি করেন তা বলার চেয়ে বরং আপনি আপনার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কি কি বাড়তি কো কারিকুলার এক্টিভিটিজ করেছেন, সেগুলা আপনারে এখন কিভাবে আরো বেশি এফিসিয়েন্ট করে তুলতে সাহায্য করেছে তা ফোকাস করুন। নিজের বাড়তি গুনাবলি গুলা বলুন যেগুলা আপনাকে ব্যাংকে কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। আপনি হয়ত ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ জড়িত ছিলেন যেগুলা থেকে আপনার মাঝে গ্রুপ ওয়ার্ক, শেয়ারিং, চাপের মাঝেও ঠিকমত কাজ করার মনমানসিকতা জন্মাতে সাহায্য করেছে। এখন আপনি নিজে নিজেকে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করেন। এভাবে নিজেকে ফোকাস করতে পারেন।

২. একদম স্বাভাবিক থাকুন, বাজারের বই এ যে নিয়ম কানুন পড়েছেন যে এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনা। এগুলা করতেই হবে, ওগুলা করাই যাবেনা। একদম ভুলে যান সব । আপনার এত বছরের পরিচিত আপনিটাকে ৫/৭ মিনিটে জোর করে চেঞ্জ করতে গিয়ে গুবলেট পাকাবেন। হাত পা আর মাথা ঠিক পজিশানে আছে কি না সেই টেনিশানে ভাইবাটাই না খারাপ হয়ে যায়। আপনি যেভাবে কমফোর্টেবল সেভাবেই বসুন। তাই বলে পা তুলে বসবেন না যেন।
৩. আপনি বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ে পড়েছেন দেখে টেনশান করছেন যে আপনি কিভাবে মনিটারি পলিসি ব্যাখ্যা করবেন, REPO রেট কি জিনিস জীবনেও শুনেন নি, কিভাবে উত্তর করবেন, তাহলে শুনুন অন্য কাওকে জিজ্ঞেস করেছে মানে এগুলা প্রশ্ন আপনাকেও করবে তা নয় । একজন ইকোনোমিকস এর স্টুডেন্টকে এগুলা জিজ্ঞেস করবে, এটা ন্যাচরাল। আপনার সাধারণ বিষয়গুলা জানলেই হবে, যেমন ব্যাংক কি, ব্যাংক কি করে, ব্যাংক রেট কি, ইনফ্ল্যাশান কি ইত্যাদি।

৪. নিজের জেলা, সাবজেক্ট আর ব্যাংকিং রিলেটেড টুকিটাকি পড়াশোনা করে যান। যেকোন প্রশ্ন আগ্রহ নিয়ে শুনেন, নিজের মত উত্তর করেন। ব্যাপারটা আড্ডার মত, না জানলে না পেঁচিয়ে "দূঃখিত, এটা আমার জানা নেই" বলে দেন। বাজারের বই পড়বেন কি না আপনার ব্যাপার, তবে যদি প্রথম ভাইবা হয় তাহলে আমি বই কিনতেই সাজেস্ট করবো। মডেল ভাইবা গুলা দেখতে পারেন, একটা জেনারেল আইডিয়া পাওয়া যাবে। তবে বই এর তথ্যগুলো আপডেটেড কিনা তা খেয়াল রাখবেন।

প্রায় ২৬০০ সিট, আপনার দরকার মাত্র ১ টা। সবার জন্য শুভকামনা।

ইমরান হাসান
এসিস্ট্যান্ট অফিসার
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

৩৭ তম বিসিএস(শিক্ষা) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ